Saturday, March 5, 2016

শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত সুবিধাবঞ্চিতরা

| No comment
শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত সুবিধাবঞ্চিতরা
এস এম আল-আমিন, টাঙ্গাইল থেকে ফিরে :

জুয়েল ছুটছেন। ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল, টাঙ্গাইল থেকে ঢাকা তার নিরন্তর ছুটে চলা। এ যেন রবার্ট ব্রাউনিংয়ের কবিতার মতো_ লক্ষ্যে না পেঁৗছা পর্যন্ত কোনো বিরাম নেই। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র জুয়েল আহমেদ। সহপাঠীদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন একটি বিদ্যায়তন। নাম ফ্রেন্ডশিপ স্কুল। সমাজের অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কাছে শিক্ষার আলো পেঁৗছে দিতেই তার এই মহতী উদ্যোগ। স্কুল থেকে ঝরে পড়া কোমলমতি শিশুদের সম্পূর্ণ বিনা খরচে লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষা উপকরণও দেওয়া হয় এখান থেকে। স্কুলকেন্দ্রিক পাঠ্য কার্যক্রমের মাঝেই সীমাবদ্ধ নেই জুয়েল ও তার বন্ধুরা। গ্রামাঞ্চলে জাতিসংঘ ঘোষিত শিশু অধিকার রক্ষা, বাল্যবিয়ে বন্ধ এবং মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক নাটক, পথনাটক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও করে আসছেন তারা।

সহপাঠীদের নিয়ে জেলার প্রত্যন্ত এলাকার অসচ্ছল শিশুদের খুঁজে বের করে তার স্কুলে নিয়ে এসে শিক্ষা দিচ্ছেন জুয়েল আহমেদ। এ জন্য প্রতি বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শেষ করে ঢাকা থেকে ছুটে যাচ্ছেন টাঙ্গাইল। আবার শনিবার তার স্বপ্নের ফ্রেন্ডশিপ স্কুলে ক্লাস নিয়ে রাতের গাড়িতে চড়ছেন ঢাকার উদ্দেশে।

আদি টাঙ্গাইলে জুয়েলের বাড়ির আঙিনায় অবস্থিত ওই স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, খোলা আকাশের নিচে শিশুরা বিভিন্ন ছড়া পড়ছে। রোদ থেকে বাঁচতে উঠানে থাকা বড় একটি বরইগাছই ভরসা। এরই ছায়ায় যেন তপোবনে পাঠ নিচ্ছে শিশুরা। সেখানে জুয়েলের সঙ্গে দেখা মিলল আরেক বিদ্যানুরাগী মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী উম্মে আতিকা সোহানীর। তিনিও গভীর মমতায় পড়া বুঝিয়ে দিচ্ছেন শিশুদের। ওই স্কুলের ছাত্রী রাখির বয়ান, 'বাবা রঙের কাজ করেন। আফা-ভাইরা (শিক্ষক) আমাগো আদর করে পড়ান।' আরেক শিক্ষার্থী হাসানুর বলে, 'আমার আব্বা মাছ বেচে। মা মানুষের বাড়িতে কাজ করে। এইহানে স্যাররা আমাকে অনেকগুলা ছড়া শিখাইছেন।'

কথা হয় স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা জুয়েল আহমেদের সঙ্গে। তিনি জানান, বর্তমানে স্কুলটির চারটি শাখায় ৭০ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশু পড়াশোনা

করছে। তাদের পাঠ দিচ্ছেন ৯ জন শিক্ষক। তাদের খুব সামান্য সম্মানী দেওয়া হয়। কেউ কেউ বিনা সম্মানীতেই তাদের মূল্যবান সময় ব্যয় করছেন এই স্কুলে।

সুবিধাবঞ্চিত অবহেলিত শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে স্কুলটির পাশাপাশি 'হিউম্যানিটি ফর পিপলস' নামে একটি সংগঠনও করেছেন জুয়েল। কয়েক বন্ধু মিলে প্রাইভেট টিউশনির টাকা দিয়ে এই সংগঠনের তহবিল গঠন করা হয় বলে জানান তিনি।

টাঙ্গাইল সদর পৌরসভার মেয়র জামিলুর রহমান মিরন সমকালকে বলেন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে গড়া এ স্কুল নিয়ে আমি খুব আশাবাদী। জুয়েলের সঙ্গে আমিও শিশুদের জন্য কিছু করতে চাই। প্রতি সপ্তাহে কয়েকবার স্কুলটির খোঁজখবর নিয়ে থাকি।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন জানান, কিছুদিন আগে ফ্রেন্ডশিপ স্কুলের কথা তিনি শুনেছেন। স্কুলটি পরিচালনার জন্য সাহায্যের আবেদন পেলে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।

http://bangla.samakal.net/2016/03/05/197306

Tags :

No comments:

Post a Comment

Articles